Friday, 28 June 2013

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, বাংলাদেশ ও বর্তমান বিশ্ব - Enloving

লক্ষ্য করুন, প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই এক একজন নেটওয়ার্কার। কীভাবে? আপনি বাজারের কোন একটি দোকান থেকে শার্ট কিনলেন। দোকানের মালিকের আন্তরিকতা, সততা এবং দামের বিষয় বিবেচনা করে দোকানটি আপনার খুবই পচ্ছন্দ হলো। আপনি আপনার এক বন্ধুকে বললেন, শার্ট কিনতে হলে ওই দোকানেই যাবি। তাহলে ঠকবি না। এখানে আপনি কিন্তু ওই দোকানের হয়ে একজন নেটওয়ার্কারের কাজ করলেন। তবে এর বিনিময়ে আপনি কিছুই পেলেন না। প্রত্যেকটি শহরের কিছু ভালো খাবারের দোকান থাকে। আপনি সেই হোটেলে খাওয়ার পর যদি ভালো লাগে, আপনি অপর এক বন্ধুকে বলেন। সেও সেখানে খেতে যায়। সে আবার অপর এক পরিচিতকে বলে। সেও ওই হোটেলে খেতে যায়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই নেটওয়ার্কিং-এর কাজ করে। আর এটাই হলো নেটওয়ার্কিং বিজনেস। 

উপরে যেসব নেটওয়ার্কিং-এর কথা বলা হলো, সেগুলো মানুষ অবচেতন মনেই করে। তার নেটওয়ার্কিং-এর কারণে কোন কোন ব্যবসায়ীরা প্রচুর লাভ করছে, কিন্তু সেই লাভের বিন্দুমাত্রও আপনি পাচ্ছেন। নেটওয়ার্কিং বিজনেসটাও হলো, ওই একইভাবে আপনি নেটওয়ার্কিং করবেন, এবং লাভবানও হবেন। 
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা ডাইরেক্ট মার্কেটিং পদ্ধতি ১৯৪০-৪১ সালে আমেরিকান একজন ফুড-কেমিস্ট রেইন বোর্গ প্রথম চালু করেছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে উৎপাদিত শাক সবজি থেকে একটি খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন এর ফর্মুলা তৈরি করে সেই ভিটামিন বিপণন প্রক্রিয়ায় গতানুগতিক বিপনন পদ্ধতিকে অনুসরণ না করে একটু ভিন্ন ধারায় সরাসরি পণ্যটি ভোক্তার নিকট বিপণনে আগ্রহী হন। তার উদ্ভাবিত বিপনন পদ্ধতিতে প্রচলিত বিজ্ঞাপন পদ্ধতিকে বর্জন করে ভোক্তার মৌখিক প্রচার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ বেকার এবং স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবীদের বা যে কোন পার্ট টাইম আয়ে উৎসাহীদের মুখে মুখে প্রচার পদ্ধতিতে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। পণ্যের উপর অধিক বিজ্ঞাপনজনিত খরচ, শোরুম ও অন্যান্য মূল্য সংযোজন না করে এবং একাধিক মধ্যস্বত্বভোগীরে বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে তা নেটওয়ার্ক কর্মীদের মাঝে তাদের স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী বন্টন করাই ছিল ড. কার্ল রেইন বোর্গের আধুনিক বিপণন পদ্ধতির মূল উদ্দেম্য। দীর্ঘ ১৮ বছর পর ১৯৫৮ সালে আমেরিকার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বৈধ মার্কেটিং পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। 
বিশ্বজুড়ে একথা উজ্জলতম সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যে, যদি কোন উৎপাদিক পণ্য বা সেবার যথাযথ বাজার বা মার্কেট না থকে, তাহলে সকল আয়োজন ধুলিসাত হবে, থেমে যাবে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের চলমান গতি। সকল উদ্যোক্তাই এ ব্যাপারে একমত যে, মার্কেটিং বিভাগ সফল না হলে কোন প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারে না। এসব বিবেচনা থেকেই বিশ্বব্যাপী রথী-মহারথী, উদ্যোক্তা ও মার্কেটিং বিশষজ্ঞরা এক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি, নীতি ও প্রয়োগিক দিক নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছেন। সে প্রেক্ষাপটে একথা গৌরবের সাথে বলা যায় যে, মাত্র কয়েক দশকে পণ্য বিপণন ক্ষেত্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিটি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অত্যন্ত সফল একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট হিসেবে সকলের আস্থা অর্জন করেছে। পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য, প্রয়োগশৈলীর নিপুণতা এবং গণমুখী প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মার্কেটিং পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহে সহযোগীতা করছে। 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এখানকার অধিকাংশ মানুষের নেটওয়ার্কিং ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। তাছাড় প্রথম দিকে এখানে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের চর্চাটাও সঠিকভাবে হয়নি। চুন খেয়ে গাল পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন দই দেখলেও ভয় পাচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। 
তবে আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের সৌন্দর্য ও পজেটিভ দিকগুলো খুব দ্রুতই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment