* পিছু লোকের কথা শোনা যাবে না
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই জানে না যে, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কী এবং কী এর সম্ভাবনা, যে কারণে যখন আপনি অন্য কাউকে বোঝতে যাবেন তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বোঝে না বা উল্টো আপনাকে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। নতুন ডিস্ট্রিবিউটররা এক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ে এবং উল্টো নিজেই বুঝে চলে আসে। ফলে কিছু কিছু ডিস্ট্রিবিউটর ধৈর্যহারা হয়ে যেতে পরে। ২৫ জনকে বোঝালে ২০ জনই আপনাকে উল্টা বোঝানোর চেষ্টা করবে, আর বাকি ৫ জন আপনার বিজনেসকে সমর্থন করবে। যারা ওই ২০ জনকে উপেক্ষা ধৈর্যহারা না হয়ে কাজ করতে থাকবে তারাই এই বিজনেসে সাফল্য লাভ করবে।
* যা করবেন এবং যা বলবেন
নিজের ভেতর এই বিজনেস সম্পর্কে পূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে। আপনি জীবন থেকে 'যদি', 'কিন্তু', 'অসম্ভব', 'সমস্যা' এবং 'চেষ্টা করবো' এই ৫টি বিষয়কে এড়িয়ে চলবেন। উন্নত স্বপ্ন দেখবেন, স্বপ্নের ছবি/প্রতিকৃতি চোখের সামনের রাখবেন। যারা সাফল্যলাভ করেছেন তাদের অনুসরণ করবেন। স্বপ্নের কথা প্রায় সময় কল্পনা
করবেন। মনের ইচ্ছা বাইরে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন, কেবল যাকে ভরসা করা যায় তাকে বলবেন। আমাদের দেশের মানুষের ধারণা, যে কাজ টেবিলে বসে করা হয় সে কাজ উচ্চমানের এবং যে কাজে ফিল্ডওয়ার্ক আছ সে কাজ নিচু মানের। অথচ একজন এম.বি.এ.এর ছাত্র পাস করে কোনো কোম্পনিতে চাকরি করে মার্কেটিং সেক্টরে। আর মার্কেটিং মানেই হচ্ছে ফিল্ডওয়ার্ক। আমরাও কিন্তু মার্কেটিংয়ের কাজটাই করছি। তফাৎটা হল মার্কেটিংয়ের চাকরিজীবীর চেয়ে আমরা অনেক বেশি আয় করতে পারি। মনে রাখবেন, চেয়ারটেবিলে বসে অসদুপায় অবলম্বন ছাড়া মাসিক সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি সাধারণত আয় করা যায় না। নেটওয়ার্ক মর্কেটিংয়ে কিছুদিন ফিল্ডওয়ার্ক করুন, চেয়ারধারীদের চেয়ে অনেক বেশি হালাল আয় করতে পারবেন। কাজেই প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউটরের উচিত নিজের বিজনেসটাকে সম্মান দেওয়া এবং লজ্জা সহকারে নয় বরং গর্ব সহকারে কাজ করা।
* সমস্যার সমাধান আপনাকেই দিতে হবে
আপনি সবসময় চিন্তা করবেন আপনার ডাউনলাইনের ডিস্ট্রিবিউটরদের সব সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করবেন। যদি প্রত্যেকেই এমন করে চিন্তা করে তাহলে আপনার নেট অতিদ্রুত চলবে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ডাউনলাইন থেকে কিছু লিডর তৈরি করবেন এবং তাদেরকে পরামর্শ দেবেন।
* ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না
আপনার ডাউনলাইনের কোনো ডিস্ট্রিবিউটর যদি ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে আপনার ক্ষতি তো হবেই, এমনকি সব মাল্টিলেভেল বিজনেসের ক্ষতি হবে। কারণ ব্যর্থ হয়ে সে ব্যক্তি আপনার আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবদের কাছে মাল্টিলেভেল বিজসেনকে খারাপ প্রমাণীত করার চেষ্টা করবে। এতে আপনি অনেক নতুন ডিস্ট্রিবিউটর থেকে বঞ্চিত হবেন। কাজেই আপনার নেট-এ যাতে কেউ ব্যর্থ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন।
* বিজনেসে সময় দিন
আপনি বেকার, ছাত্র, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী যাই হোন না কেন দিনে অন্তত ২ ঘণ্টা সময় এই বিজনেসের জন্য ব্যয় করবেন। তাছাড়াও আপনি যখনই সময় পাবেন তখনই বিজনেস নিয়ে ভাববেন এবং পরিকল্পনা করবেন যে আপনি কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবেন। মাল্টিলেভেল বিজনেস ধীরে ধীরে সম্পূর্ণরূপে আপনাকে বুঝতে হবে। কোনো বিষয়ে দক্ষ না হলে যেমন সেই বিষয়ের মাস্টার হওয়া যায় না, তেমনি নেটওয়ার্ক বিজনেসের কৌশল না বোঝা পর্যন্ত সাফল্য লাভ করা যায় না। নিজের ভেতরের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলো সিনিয়র অভিজ্ঞ ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে জেনে নেবেন। (চলবে)
** বাধা অতিক্রম করতে হবে
সফল হতে হলে বিভিন্ন সময় বাধা-বিঘ্ন মোকাবিলা করতে হবে। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ছোটখাটো বাধায় আপনার স্বপ্ন ভেঙে যেতে পারে। সুতরাং সততা, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য নিয়ে কাজ করলে আজ হোক কাল হোক সফলতা আসবেই।
** কাজ করার এখনই সময়
জীবনটা অভিনয়ের আগে 'ড্রেস রিহার্সেল' নয়। সে জীবন দর্শনেই বিশ্বাস থাকুক না কেন জীবনের খেলায় আমাদের হাতে মাত্র একটি গুলি আছে। এই খেলার বাজি অনেক বেশি বাজি হচ্ছে ভাবিষ্যৎ প্রজন্ম। সুতরাং কাজ করতে হবে এখনই। বর্তমান সময়কে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এর অর্থ অবশ্যই আছে। যদি বর্তমানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর যায় তবে স্বাভাবিকভাবে তা-ই হবে ভবিষ্যতের জন্য বীজ বপন করা।
যোগদান-পরবর্তী করণীয় টিপস
** বিজনেস সেমিনার ও বেসিক ট্রেনিং কোর্সের সময়সূচি ও ভেন্যু (স্থান) জেনে নিন।
** কোম্পানির অনুমোদিত সনদপত্রসমূহের (লিগ্যাল পেপার) সংগ্রহ করন।
** ডিস্ট্রিবিউটরস্ ট্রি-পেপার, বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় আবেদন ফরম, আমন্ত্রণ তালিকা, প্রোগ্রেস রিপোর্ট ও টার্গেট-প্ল্যানের ফরমেট সংগ্রহ করুন। আপনার স্পন্সর বা আপলাইনের একজন সিনিয়র ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে কাগজপত্রগুলোর প্রাপ্তিস্থান জেনে নিন।
** ভিজিটিং কার্ডের জন্য অর্ডার দিন।
** (আবেদন ও চুক্তি ফরমে লিখিত চুক্তিনামার প্রতিটি পয়েন্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।)
** (কীভাবে ফরম পূরণ ও ডিস্ট্রিবিউটরস ট্রি মেন্টেন করতে হয় শিখুন।)
** পরপর ৮টি ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ ক্লাসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কমপক্ষে ২ বার বেসিক ট্রেনিং কোর্সটি সম্পন্ন করুন। ট্রেনিংয়ের সময় একটি নোটবুক সঙ্গে রাখুন।
** ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি পরিপূর্ণভাবে ব্যবসায়িক ধারণা (বিজনেস কনসেপ্ট) লাভের জন্য আরও ৪/৫টি বিজনেস সেমিনার অংশগ্রহণ করুন এবং আপলাইনের সঙ্গে আলোচনা করে পরিষ্কার ধারণা নিন।
** সব সময় কাগজ, কলম, ডায়েরি, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, পণ্যতালিকা,লিগ্যাল পেপার, ব্যবসায়িক প্রচারপত্র, ক্যাটালগ, ট্রেনিং ক্যাসেট, সিডি, ডকুমেন্টস ফাইল, ক্যালকুলেটর, স্ট্যাপলার মেশিন, স্ট্রাপলার পিন, পাঞ্চ মেশিন ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিজের কাছে রেখে ব্যবহার করুন।
** একটি শোভনীয় ফাইলবক্স বা হ্যান্ডব্যাগে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলো রেখে ব্যবহার করুন।
** সবসময় অফিসিয়াল পোশাক ব্যবহার করুন।
** প্রতিদিন অফিসে আসুন; না পারলে সপ্তাহে অন্তত ২ বার অফিসে আসুন।
** সততার সঙ্গে কাজ করুন এবং মিথ্যা পরিহার করুন।
** অজুহাত পরিহার করুন, আলস্য ত্যাগ করুন এবং ব্যবসার জন্য প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় ব্যয় করুন।
** হোমওয়ার্ক করুন। (যেমন- আমন্ত্রণ তালিকা তৈরি, টার্গেটপ্ল্যান, ট্রি-মেন্টেন শিট পূরণ)।
** ক্রসলাইনের ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখুন এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করুন।
** সহকর্মীদের সম্বন্ধে কখনো কোনো আশোভনীয় মন্তব্য করবেন না।
** নিয়মিত সাপ্তাহিক টিম-মিটিংয়ে অংশ নিন এবং নিজের টিম গঠনের পর নিয়মিত সাপ্তাহিক টিম মিটিংয়ের আয়োজন করুন বা টিম মিটিংয়ে অংশ নিন।
** হতাশ হবেন না, ধৈর্য ও মনোবল ধরে রাখুন। কোনো অপপ্রচারে ঘাবড়াবেন না বা বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ এম.এল.এম. ব্যবসা খুবই স্বচ্ছ এবং ঝুঁকিমুক্ত।
No comments:
Post a Comment