প্রথম অধ্যায়
- স্বপ্নের শুরু যেখান থেকে
- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসাঃ শ্রেষ্ঠতম সুযোগ-সহজতম উপায়
- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং দক্ষতা অর্জনের উপায়
- কেন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় অনেকে ব্যর্থ হয়
- নিজেকে বদলে দিতে পারেন-আপনি নিজেই
দ্বিতীয় অধ্যায়
- সফল দল (টীম) গঠন করার কৌশল
- যেভাবে টিমওয়ার্ক করবেন?
- নেটওয়ার্ক মার্কেটিংঃ মিলিয়নিয়ার হওয়ার সহজ পথ
- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ঃ যা ভাবছেন তার চেয়ে কঠিন তবে সহজতম কাজগুলোর একটি
তৃতীয় অধ্যায়
- এম.এল.এম. পণ্য সামগ্রী বিক্রয় কৌশল
- হারবাল পণ্য ও নিউট্রিশনাল ফুড সাপ্লিমেন্ট্স বিক্রয় কৌশল
- সঠিক এমএলএম প্রতিষ্ঠান বাছাই করা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?
- এমএলএম প্রতিষ্ঠান গড়তে যা মনে রাখা উচিত
- প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা
চতুর্থ অধ্যায়
বিশেষ কারণে চতুর্থ অধ্যায়টি দেয়া হয়নি
প্রথম অধ্যায়
স্বপ্নের শুরু যেখান থেকে
সেই ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে।’ মায়ের সেই প্রেরণা ছিল ছেলেকে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী করা। গাড়ি ঘোড়ায় চড়ার কৌতুহলে জন্যই পড়ার প্রতি আকর্ষন। শিশু মনে গাড়িতে চড়ার আকাঙ্খা ও স্বপ্ন। এখানে থেকেই স্বপ্নের শুরু। তারপর স্বপ্ন দেখা পড়া লেখা শেষ করে বড় হওয়া। ক্রমাম্বয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন। যত দিন যায় স্বপ্নের ধরন পাল্টায়। একটা স্বপ্ন পূরণ না হলে পূনরায় স্বপ্ন দেখা, প্রতিজ্ঞা করা। অবশেষে ভাল চাকুরীর স্বপ্নে ব্যস্ত শহরে ছুটে আসা। সাময়িক কষ্টের কথা ভুলে গিয়ে সুখের ভবিষ্যত গড়ার প্রত্যয়ে সংগ্রাম, সাধনা, আগামীকালের প্রতিশ্রুতি, অমলীন হাসি দেখার স্বপ্ন। মা-বাবাকে নিয়ে সুখের সংসার করার স্বপ্ন। সন্তানদের মুখে ভাল আহার ও সুন্দর পরিচ্ছদ তুলে দেয়ার স্বপ্ন, ভাল স্কুলে পড়িয়ে সুশিক্ষিত ও আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন।
স্বপ্নের শুরু জীবনের শুরুতেই। স্বপ্নের হিসাব কষার সুযোগ মেলে না আমাদের। যা পেয়েছি তাতেই সন্তুষ্ট কিংবা অসন্তুষ্ট হয়ে পূনরায় স্বপ্নের ঘোরে ফিরে যাই আমরা। যাপিত জীবনে বেঁচে থাকার অবলম্বনই স্বপ্ন। জীবনের যেখানে সমাপ্তি স্বপ্নের সমাপ্তি যেখানে। স্বপ্ন জীবনের তৃপ্তি ও অতৃপ্তির মাঝে ব্যবধান গড়ে দেয়। অতৃপ্ত জীবনে বেঁচে থাকার অবলম্বন স্বপ্ন।
অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে আমরা নানাবিধ কাজে মগ্ন হই। কখনো হেরেছি আবার কখনো জিতেছি। ভাঙা মন আর অবসন্ন দেহ নিয়ে পূনরায় জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি। সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য প্রানপন চেষ্টা।
অর্থের অভাবে জীবনকে অর্থহীন মনে করা। অভাব পূরনের সামর্থ্যকে বাড়িয়ে তোলার জন্য ভবিষ্যতকে নিরাপদ রাখার জন্য এবং সর্বোপরি আত্মতৃপ্তি লাভের জন্য আমরা বেছে নিতে পারি মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং। শুধু অর্থের জন্য নয়, সময়, অবকাশ জীবনের জন্য মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং নতুন করে আশায় বুক বেঁধে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকি। আসুন আমরা সুন্দর স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করি। অন্যকে স্বপ্নপূরনে সহযোগিতা করি। নিজেকে অন্যদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখি।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসাঃ শ্রেষ্ঠতম সুযোগ-সহজতম উপায়
জীবনে হয়তো অনেক সুযোগ পেয়েছেন যার অধিকাংশই আপনি কাজে লাগাতে পারেননি। কিন্তু বলতে পারবেন কি শ্রেষ্ঠতম সুযোগ কোনটি? হয়তো পারবেন না কারণ সেই সুযোগটি আপনি হাতছাড়া করেছেন। যাই হোক আপনি হয়তো আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। আমি বলতে পারি এ সুযোগটি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা। হয়তো বা একমত পোষণ করতে পারছেন না। দেখা যাক কেন এ পদ্ধতিকে শ্রেষ্ঠতম সুযোগ বলছি-
১. যা চাইবেন তাই পাবেনঃ আপনার চাওয়া কি? অর্থ-সম্পদ, সামাজিক মর্যাদা, প্রতিপত্তি, দ্রুত অবসর গ্রহণ, বিশ্বভ্রমণ সবই অর্জন করতে পারবেন একটি সুযোগ গ্রহণ করে আর সেই সুযোগটি হলো নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা। পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় সুযোগ কি আছে যা আপনাকে উপরের সব চাওয়া পূরণ করে দিতে পারে। এবার আপনিও নিশ্চয় বলবেন এটি সময়ের শ্রেষ্ঠতম সুযোগ।
২. মূলধন ও ঝুঁকিবিহীন একমাত্র ব্যবসাঃ যদি আপনাকে প্রশ্ন করি মূলধন ও ঝুঁকিবিহীন কয়েকটি ব্যবসার কথা বলুন আপনি হয়তো বলতে পারবেন তবে আমার জানা নেই। চারদিকে লক্ষ্য করুন, হাজারো মানুষ প্রচুর মূলধন, কঠোর পরিশ্রম আর বিশাল ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসার পিছনে দৌঁড়াচ্ছে। আর আমি বলছি মূলধন ও ঝুঁকিবিহীন ব্যবসার কথা। শুধু মূলধন বিহীন ও ঝুঁকিমুক্তই নয় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পৃথিবীতে একমাত্র ব্যবসা যার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে হাজারো টাকা আয় করা যায়। অবাক হচ্ছেন? এজন্যই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুযোগ।
৩. নেতা হওয়ার সুযোগঃ নেতৃত্ব প্রদান করা বা নেতা হওয়া অতটা সহজ ব্যাপার নয়। আপনি নেতা হতে চাইলেই আপনাকে সবাই নেবে কেন? অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা, যোগ্যতা ও অর্থের প্রয়োজন নেতা হওয়ার জন্য। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রয়োজন সততা, ইতিবাচক মনোভাব, সৃজনশীল ভাবনা ও ব্যক্তিত্ব। এ ব্যবসায় নেতা হওয়ার জন্য তেমন অর্থের প্রয়োজন হয় না কিন্তু নেতা হওয়ার পর অর্থের প্রাচুর্যতা অর্জন করা যায়।
৪. শিখনের সর্বোত্তম আঙিনাঃ আমাদের চারপাশের পরিবেশে পরিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ পরিবর্তনের সাথে খাপ-খাইয়ে চলার জন্য মানুষকে আয়ত্ত করতে হয় নতুন নতুন জ্ঞান, কৌশল ও আচরনের। এসব নতুন জ্ঞান কৌশল ও আচরণ আয়ত্ত করাকে বলা হয় শিখন। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর পরিসর শিখনের বিশাল ক্ষেত্র। এখানে আচার-আচরণ, কলা-কৌশল জ্ঞার্নাজন, সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন, মুক্তচিন্তা ইত্যাদি অনেক কিছুই শেখা সম্ভব। সর্বোপরি বলা যায় এটি শিখনের অদ্বিতীয় আঙিনা।
৫. পরের কল্যানে কাজ করার অন্যতম ক্ষেত্রঃ আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা পরের কল্যানে নিবেদিত। আবার অনেকের ইচ্ছে স্বত্তেও পারছেন না নিজের অসামর্থ্য ও দূরাবস্থার দরুন। এমন খুব কম সুযোগ আছে যেখানে নিজের অবস্থার পরিবর্তনের পাশাপাশি পরের কল্যান করা সম্ভব। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং তেমনি একটি ক্ষেত্র যেখানে দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকের কল্যানে আপনি কাজ করার সুযোগ পাবেন। যারা ছোট-খাট সুযোগের আশা করে পায় না তারা হঠাৎ বড় সুযোগ পেলে বিশ্বাস করতে চায় না। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় ঐ সমস্ত মানুষকে সুযোগ গ্রহণের সঠিক পথ দেখিয়ে দিন, তারা কৃতজ্ঞতার সহিত আপনাকে স্মরণ করবে।
৬. অবসর গ্রহনের পরও অব্যাহত আয়ঃ অবসর গ্রহনের পর আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়। খুব কম সংখ্যাক মানুষ অবসরের পরবর্তী জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে যাপন করতে পারে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় সফলতা অর্জন সম্ভব যা মানুষকে পরমুখাপেক্ষীতা হতে রক্ষা করে। আনন্দে ও প্রফুল্ল জীবন যাপনের জন্য এ ব্যবসা শ্রেষ্ঠতম।
মূলধন বিহীন, ঝুঁকিমুক্ত, সময়ের বাধ্যবাধকতাবিহীন উর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মচারী বিহীন এ ব্যবসা বর্তমানে পৃথিবীর সহজতম উপায়। যে মানুষ দ্বারা কিছুই সম্ভব নয় তার দ্বারাও এ ব্যবসা সহজ। সামান্য পরিশ্রম ও ইতিবাচক মনোভাব-ই যথেষ্ঠ এ ব্যবসার জন্য।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং দক্ষতা অর্জনের উপায়
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় সফলতা লাভের জন্য কিংবা রয়্যালটি আয় উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন দক্ষতা অর্জন। এমএলএম দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা যেতে পারে তন্মধ্যে নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন ত্বরাম্বিত হয়।
ক) সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ভালভাবে জানাঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং হোক কিংবা অন্য কোন পেশা, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিষয়টি ভালোভাবে জানা, ভালোভাবে জেনে শুরু করা আর না জেনে শুরু এ দুয়ের পার্থক্য হলো সাফল্য। কারণ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান লাভের জন্য প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে, পৃথিবীর খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করুন।
খ) সফল নেটওয়ার্কারদের অনুসরণ করুনঃ দক্ষতা অর্জনের জন্য সফল নেটওয়ার্কারদের অনুসরন করুন যেমন-তারা কিভাবে কাজ করছে, কিভাবে কথা বলছে, কিভাবে প্রেরণা যুগাচ্ছে, কি উপদেশ দিচ্ছে, কিভাবে গ্রুপ বা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে, পণ্য বিক্রয়ে কি কৌশল অবলম্বন করছে ইত্যাদি। আপনি জ্ঞানী হলেও নেটওয়ার্ক মার্কেটিং সম্পর্কিত জ্ঞান তাদের বেশি থাকাই স্বাভাবিক, নতুন নতুন তথ্য জানার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। নিজের চেয়ে সফল যারা তাদের অনুসরণ করা মানে নিজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।
গ) ভালো বক্তা হয়ে উঠুনঃ ভালো বক্তা হওয়ার জন্য ভালো জানতে হবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এজন্য ভালো বক্তা হওয়া মানে দক্ষতা অর্জনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া। শুধু নিজে বলবেন তা নয় অন্যদের বলার সুযোগ দিতে হবে। অধিকাংশ ব্যক্তির মতামতের সহিত যখন আপনার মতামত মিলে যাবে তখনই বুঝবেন আপনার সিদ্ধান্ত সমূহ সঙ্গতিপূর্ণ যা দক্ষতার পরিচয় বহন করে।
ঘ) সকল প্রকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুনঃ দক্ষতা অর্জনের জন্য সকল প্রকার প্রশিক্ষন গ্রহন করতে হবে যেমন পণ্য সম্পর্কিত ও বিক্রয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষন, প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ, মনোভাব বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কমিশন পদ্ধতি ও টীম বিল্ডিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। প্রতিটি বিষয়ের পৃথক প্রশিক্ষন আপনাকে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা লাভে এগিয়ে নেবে। প্রশিক্ষনের পর যে কোন কাজ পূর্বের চেয়ে অনেক সহজবোধ্য মনে হবে এবং সঠিকভাবে সম্পাদন করার অনেক কৌশল আপনি বের করতে সক্ষম হবেন।
ঙ) এমএলএম এর মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করুনঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় সফলতার জন্য দক্ষতা প্রয়োজন এবং দক্ষতা লাভের জন্য এমএলএম-এর মৌলিক বিষয় যেমন প্রেজেন্টেশন, ক্লোজিং, ফলোআপ, প্রশিক্ষন ইত্যাদি বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে হবে। ডাউন-লাইনে ডিস্ট্রিবিউটরের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আপ-লাইনার বা লিডারদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। দক্ষতার সাথে পরিচালনায় ব্যর্থ হলে আপনার সফলতার সম্ভাবনাও ক্ষীন হয়ে আসবে। এজন্য এমএলএম এর মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
চ) ভালো উদ্যোগী হয়ে উঠুনঃ যে কোন কাজে উদ্যোগ গ্রহন করা একটি উৎকৃষ্ঠ গুণ। কিছু মানুষ আছে যারা বেশ উদ্যোগী এবং এমন নতুন নতুন বিষয় তারা তৈরী করে যা দ্বারা সকলেই উৎসাহী হয়। ভালো ও আকর্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন এবং উদ্যোগ নিন তা সম্পন্ন করার। যেমন ধরুন দীর্ঘদিন যাবত একই স্থানে (বদ্ধরুমে) প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হঠাৎ এর পরিবর্তন করে নতুন উন্মুক্ত কোন স্থানে আয়োজন করলে তা অবশ্যই আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ হবে। এসব উদ্যোগ গ্রহন দক্ষতার ছাপ রাখবে।
ছ) কাজে আনন্দ সৃষ্টি করুনঃ যে কাজ আপনাকে আনন্দ দেয় সে কাজের ফলাফলও চমৎকার। অর্থাৎ যে কাজ আপনাকে করতে হবে সে কাজে আনন্দ সৃষ্টি করুন। মনে রাখবেন কাজ করার সময় কাজের ফলাফলের চিন্তা না করে সঠিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন। যেমন ভালো ক্লোজিং ও সঠিক সময়ে ফলোআপ করলে সম্ভাব্য ক্রেতার ইতিবাচক ফলাফল আসবেই। এজন্য যে কাজ করা উচিত তা আগে করুন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজে আনন্দ তৈরী করুন।
কেন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় অনেকে ব্যর্থ হয়
যারা ব্যর্থ তারা সব কাজে ব্যর্থতার সম্ভাবনা থাকে। কারণ তারা কাজে নামার পূর্বে ব্যর্থতার ভয় কাঁধে নিয়ে নেয়। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং একটি সহজ ব্যবসা। কিন্তু অনেকের জন্য ভয়ংকর রকম জটিল। কোনো ধারণা নেই এমন একজন লোক যখন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা আরম্ভ করে এবং কোনো প্রশিক্ষণ ব্যতীত নতুনদের পরামর্শ দেয় তবে তার ব্যবসা জটিল হবেই। একজন অতি বুদ্ধিমান লোক যখন জানতে পারলেন ডাউন-লাইনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কমিশন বৃদ্ধি পায় পরদিন তিনজন নতুন অতিথি নিয়ে উপস্থিত হলেন। কিন্তু অতি বুদ্ধিমান লোকটি তখনো ব্যবসারম্ভ করেননি। পরের ঘটনা বুঝতেই পারছেন চারজনই তর্কে জড়িয়ে পড়ল কে আগে জয়েন করবে। এজন্য এ ব্যবসায় প্রশিক্ষন কিংবা দিক নির্দেশনা অত্যাবশ্যক। আমরা এক নজড়ে দেখে নেই কেন এমএলএম ব্যবসায় অনেকে ব্যর্থ হয়।
১. যিনি ব্যবসা বুঝেন নাঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিকে আমরা ব্যবসা হিসেবে চিহ্নিত করি। অবশ্যই সফলতার জন্য ব্যবসা বুঝতে হবে। ব্যবসা মানে কি শুধু লাভ-ক্ষতির? দশ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম একবছর শোরুম কিংবা ঘরভাড়া যোগান দেয়া কষ্টকর হয়ে যেতে পারে। তাহলে কি পরের বছরই ব্যবসা ছেড়ে দেয়? ধৈর্য্য, অভিজ্ঞতা অর্জন, পরিচিতি ও মুনাফা অর্জন করতে হবে তবেই লাভ আসবে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় সবকিছুর জন্য যদি দু’মাস ব্যয় করেন-দীর্ঘ মেয়াদী আয়ের পর সৃষ্টি হবে। যিনি দু’মাস ব্যয় করতে পারেননা ধরে নিতে হবে তিনি ব্যবসা বুঝেন না। তিনি ব্যর্থ হবেন এটাই সত্য।
২. মার্কেটিং জানেন না বলেইঃ যে কোন পণ্য বিপননে আপনাকে কথা বলতে হবে। পণ্যের গুণাগুণ, মূল্য, বিক্রয়োত্তর সেবা ইত্যাদি বলতে না পারলে বিক্রয় সম্ভব হয় না। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ এসব ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী কমিশন ও রেমিডিউল আয়ের সম্পর্কে বলতে হবে ক্রেতাদের। অর্থাৎ কোম্পানী, পদ্ধতি ও পণ্য সম্পর্কিত বিপননে ব্যর্থ হলে আপনি ব্যর্থ হবেন। আমরা নেতিবাচক পরিবেশে বাস করে এমন অভ্যস্থ যে কেউ কোন সুযোগ বা সম্ভাবনার কথা বললে ও বিশ্বাস করতে চাইনা। এজন্য ভালো বিক্রয়কর্মী না হলে আপনি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ সফলতা পাবেন না।
৩. অসৎ উপায় অবলম্বনঃ এমএলএম ব্যবসায় সফলতা প্রাপ্তি যেমন সহজ তেমনি ব্যর্থতাও দেখা যায় যখন কেউ অসৎ উপায় অবলম্বন করে যেমন ডাউন-লাইনের অতিথি চুরি করা, তাদের ভুল পরামর্শ দেয়া, অন্য গ্রুপে বিবাদ সৃষ্টি করা অন্যদের অর্থ আত্নস্বাত করা ইত্যাদি। যেহেতু এমএলএম ব্যবসায় ডুপ্লিকেশন হয় এজন্য আপনি যা করবেন ঠিক আপনাকেই অনুসরন করবে আপনার ডাউন-লাইনাররা। আপনার শিখানো পন্থায় আপনাকে ব্যর্থ হতে বাধ্য করবে।
৪. অন্যের উপর নির্ভরশীলতাঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় দলীয় উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি তাই বলে অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। নিজের কর্মদক্ষতা প্রমান করতে পারলেই সফল হওয়া সম্ভব। অনেক বুদ্ধিমান মানুষ নির্বুদ্ধিতার কাজ করে যখন অন্যকে দিয়ে নিজের কাজটুকু সারিয়ে ফেলতে চায়। এ ব্যবসায় প্রত্যেককে দৌড়াঁতে হয় যারা পিছনে পড়ে যায় তারা পূনরায় নিজস্থান দখল করতে বহুগুণ কষ্ট করতে হয়। পরিবর্তনশীল তাদের ব্যর্থতা অনিবার্য।
৫. নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতাঃ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় এককভাবে বিপণন করে বেশি দূর এগোনো যায় না। যখনই নতুন কাউকে স্পন্সর করবেন কিংবা দলগঠন করার চেষ্টা করবেন তখনি নেতৃত্ব প্রদানের বিষয়টি চলে আসে। আপনার ডাউন-লাইনে যতবেশি নেতা তৈরীতে সক্ষম হবেন আপনার সফলতা তত বেশি হবে। কিন্তু নেতা তৈরীর জন্য আপনাকে নেতা হতে হবে। অর্থাৎ নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য প্রয়োজন। নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার দরুন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় অনেকে ব্যর্থ হয়।
নিজেকে বদলে দিতে পারেন-আপনি নিজেই
একটু চোখ-কান খোলা রাখুন কিংবা দৈনিক পত্রিকায় নজর দিলেই দেখতে পাবেন কিছু সংগ্রামী ও সাহসী মানুষের গল্প। তাদের অনেকেরই রয়েছে অতীত ব্যর্থতার ইতিহাস। কেউ চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছে। কেউবা একটা সুযোগের জন্য বেড়িয়েছে প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে। অবশেষে নিজের প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কেউবা নিজের ব্যবসাটুকু হারিয়ে পূনরায় গ্রামে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কোন এক অদৃশ্য শক্তি তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে বলেই তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে। এ অদৃশ্য শক্তির নাম আত্মোপলদ্ধি, এ অদৃশ্য শক্তির নাম বিশ্বাস। যারা হার মেনে নিয়েছে তারা কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। মনের শক্তিই শারিরীক প্রতিবদ্ধীদের সফল করতে সাহায্য করে। আমরা আমাদের অক্ষমতাকে যেমন মেনে নিই তেমনি যা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সক্ষম তাও অক্ষম করে তোলি। আমরা আমাদের ভাগ্যকে দোষারোপ করি, ফলাফল আমাদের পিছিয়ে পড়া। নিজেকে বদলে দেয়ার জন্য দুটি বিষয় প্রথমত গুরুত্বপূর্ণ-অদৃশ্য ইচ্ছেশক্তি ও দৃঢ় বিষয় প্রথমত গুরুত্বপূর্ণ অদম্য ইচ্ছেশক্তি ও দৃঢ় বিশ্বাস। এমন অনেককেই পাবেন আপনার চারপাশের যারা অল্প সময়ে আপনাকে অবাক করে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। পার্থক্য হলো তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল, আপনার ছিল না। যদি এমনটি ভাবেন একদিন আপনার ভাগ্যের দুয়ার খোলে যাবে তখন সাফল্য আপনা-আপনি ধরা দিবে, তবে ভুলের মধ্যে আছেন, নিজেকে বদলানোর দায়িত্ব আপনার নিজের। আপনার বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের জন্য যে বিষয়টি আপনার সর্বোচ্চ সহায়ক তা হতে পারে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং। আপনার আর্থিক ও মনস্তান্তিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর বিকল্প নেই। নিজের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন শেষ করলেও কখনো লোকসম্মুখে বা স্টেজে বলার সাহস করিনি। কিন্তু এমএলএম জগতে এসে দীর্ঘ সময় বক্তব্য প্রদান করেছি, প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। মানুষ জেনেছি-মানুষকে বুঝেছি। এ এক বিশাল প্রাপ্তি। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং জগতে এসে কেউ কিছু পায়নি এ অন্তত আমি বিশ্বাস করিনা। হারানো মানুষের সাথে মিলে মিশে কাজ করতে গিয়ে কতটা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব তা বুঝা যায় যখন এ পরিবেশে কেউ প্রবেশ করে। হরেক রকম মানুষের মেলা এখানে সাদা-কালো, ভালো-মন্দ, সৎ-অসৎ, বুদ্ধিমান, চতুর ইত্যাদি। চমৎকার এক পরিবেশ এটি। নিজে জানার, নিজেকে জানানোর, অন্যকে বুঝার অন্যকে বাগে আনার অন্যন্য ক্ষেত্র এটি। তবুও বলব সব কিছু নিজের কাছে। নিজেই বদলে দিতে পারেন নিজেকে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
সফল দল (টীম) গঠন করার কৌশল
যে কোন সংগঠনের বা প্রতিষ্ঠানে সফলতার মূলভিত্তি শক্তিশালী দল বা টীম গঠন। সেটা হোক ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা, হোক স্থাপত্য নির্মান কিংবা উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি সব কিছুর মূলে রয়েছে শক্তিশালী দলের ভূমিকা। দলীয় লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয় যখন ব্যক্তিগত লক্ষ্য অর্জিত হয় যা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় শতভাগ সত্য। প্রতিটি মানুষেরই দলগঠন করার কিছু কৌশল জানা থাকে যা জন্মলাভের পর পরিবেশ হতে শিখতে থাকে। আপনি যখনই দল গঠন করতে যাবেন নিন্মোক্ত কিছু বিষয় নির্ধারন করতে হবে।
- দল বা টীমের লক্ষ্য কি?
- দল বা টীমের উদ্দেশ্য কি?
- দলের নীতিমালা কি হবে?
- দলের কার্যক্রম কি হবে?
আপনার অভিজ্ঞতা, শিক্ষন, আপ-লাইন ডিস্ট্রিবিউটরদের সহিত আলোচনা এবং এক্সপার্টদের পরামর্শ গ্রহন করবেন উপরোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারনের ক্ষেত্রে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় এককভাবে কেহ সফল হতে পারে না। অন্যদের সহযোগিতা ব্যতীত। উদাহরণ স্বরুপ ধরুন, আপনি আপনার ডাউনলাইনারদের নিয়ে যে দলটি গঠন করেছেন এর নাম দিয়েছেন “বিবর্তন চ্যালেঞ্জ গ্রুপ।” আপনার ঠিক ইমিডিয়েট ডাউনলাইনার (যাকে সরাসরি হাত বলে থাকি) আর একটি দল গঠন করেছে যার নাম “এক্সপার্ট মিশন গ্রুপ” ধরে নিই আপনার ডাউনলাইনের এরূপ দশটি গ্রুপ বা দল কাজ করছে। ডাউনলাইনের প্রত্যেকটি দলের সফলতা আপনার জন্য সফলতা বয়ে আনবে। লক্ষ্য করুন প্রতিটি দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে সামঞ্জস্য আছে। দলনেতা হিসেবে আপনার কাজ হবে নীতিমালা ও কার্যক্রম নির্ধারনে সহযোগিতা প্রদান। আপনার ডাউনলাইনের প্রতিটি দল বা গ্রুপই আপনার গ্রুপের সাব-গ্রুপ।
বিবর্তন চ্যালেঞ্জ গ্রুপ
এক্সপার্ট মিশন গ্রুপ লুকিং ফর সাকসেস গ্রুপ
নিউত্ররা গ্রুপ
এবার দেখা যাক যাদের নিয়ে দল বা গ্রুপ তৈরী করবেন তাদের কিভাবে বাছাই করবেন। আপনার ডাউনলাইনের প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউটরই আপনার গ্রুপের সদস্য, কিন্তু এদের মধ্যে রয়েছে পরিশ্রমী আবার কেউবা অলস। কারো আগ্রহ বেশি কারও কম। এদের মধ্য হতে বাছাই করতে হবে গ্রুপের দায়িত্বশীল লোকদের। বাছাইয়ের জন্য নিন্মোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ
প্রথম ধাপঃ ডাউনলাইন ডিস্ট্রিবিউটরদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করুন। এবার পরীক্ষা করে দেখুন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মতো তার যোগ্যতা আছে কিনা।
দ্বিতীয় ধাপঃ ব্যক্তির আগ্রহ যাচাই করুন। শখের বসে যারা কাজ করছে তারা যে কোন দলের জন্য উপযুক্ত নয়। যারা এ ব্যবসা সম্পর্কে খুবই আশাবাদী ও ফলাফল প্রত্যাশী তাদের চিহ্নিত করুন। এজন্য দক্ষ দলনেতা হিসেবে আপনাকে আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা আবশ্যক।
তৃতীয় ধাপঃ এধাপে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া যাচাই করুন। কাজের ধরন, নিরলস শ্রম ও ব্যক্তিক উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে ডিস্ট্রিবিউটররা ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া করে। আপনি যাদের নিয়ে দল গঠন করবেন তাদের নিকট হতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া একান্ত আবশ্যক।
চতুর্থ ধাপঃ এধাপটিতে যাচাই করুন আগ্রহী ব্যক্তি কতটুকু দায়িত্বশীল। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ ব্যক্তিদের দায়িত্বপ্রদান অনুচিত। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের খুঁজে নেয়ার জন্য প্রথমে তাদের ছোট কাজ দিন এবং সময় বেঁধে দিন। যারা অধিক আগ্রহী কিন্তু দায়িত্বে অবহেলা করে তারা যে কোন দলের জন্য ক্ষতিকর আবার যারা আগ্রহী ও দায়িত্ব পালন করে তারা দলের নেতৃত্বে যোগ্য।
পঞ্চম ধাপঃ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর ব্যক্তির আগমন ঘটবে আপনার দলে। কেউবা চাকুরীজিবী, কেউবা ব্যবসায়ী, কেউবা ছাত্র, কেউবা গৃহবধু, কেউবা চাকুরী সন্ধানী, কেউবা পেশাজীবি ইত্যাদি। আপনাকে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যেমনঃ- চাকুরীজিবীরা পূর্ণ সময় প্রদানে অক্ষম, আবার গৃহবধুরা নির্দিষ্ট সময় প্রদান করতে পারবেন না ইত্যাদি।
উপরোক্ত সব বিষয়গুলো বিবেচনা করে দল গঠন করতে হবে। একই দলে বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর লোকজনের সমাগম ঘটাতে হবে। এতে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলাফলও অনেক শ্রেয়।
যেভাবে টিমওয়ার্ক করবেন?
দল গঠন করার মধ্যেই আপনার কাজ সীমাবদ্ধ নয়। দলগঠন করার পরপরই আপনার মূল কাজগুলো শুরু হবে। এতদিন এককভাবে যেসব কাজ সম্পাদন করছেন সেসব কাজের ফলাফল হয়তো খুব ভালো নয়। কিন্তু যখন দল গঠন করবেন তখন কাজের পরিধি বাড়বে, পাশাপাশি কাজের ফলাফলও অর্জিত হবে। আপনার প্রথম কাজ হবে আপনি যাদের নিয়ে দল (টীম) গঠন করবেন। তা নির্ধারণ। পূর্ববর্তী লেখায় আমরা দেখেছি কিভাবে সফল দলগঠন করবেন। এ পর্বে আলোচনা করবো কিভাবে দলীয় কার্যক্রম সম্পাদন করবেন বা টীমওয়ার্ক করবেন। ধরে নিই আপনার প্রথম দলে নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ কাজ করেন।
১ম জনঃ চাকুরী প্রাথী অর্থাৎ পূর্ণ সময় প্রদানকারী।
২য় জনঃ সরকারী চাকুরীজিবী অর্থাৎ পার্টটাইম সময় প্রদানকারী।
৩য় জনঃ স্কুল শিক্ষক অর্থাৎ পার্টটাইমার।
৪র্থ জনঃ একজন গৃহিনী, অর্থাৎ কখনো ফুলটাইমার কখনো পার্টটাইমার।
এক্ষেত্রে আপনার প্রথম দলের সম্ভাবনা ৮০% এবং তা নির্ভর করছে ১ম ব্যক্তিকে কতটা কাজে লাগাতে পারছেন। তাকে আপনার ডুপ্লিকেট করে তুলুন। তার মাঝে মিলিয়নিয়ার হওয়ার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলুন। সে হবে আপনার প্রথম দলের পরিচালক। এছাড়া অন্যরা তাদের রুটিন ওয়ার্ক সম্পাদন করবে। অর্থাৎ নতুন স্পন্সর তৈরী, সাপ্তাহিক ও মাসিক লক্ষ্য পূরণ, এবং বিক্রয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। ধরুন আপনার দ্বিতীয় দলে নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ কাজ করেন। যেমন-
১ম জনঃ প্রাইভেট ফার্মের কর্মকর্তা।
২য় জনঃ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসার।
৩য় জনঃ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
৪র্থ জনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র।
এদলেরও যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অফিসে নিয়মিত করতে পারলে দলটির সফলতার সম্ভাবনা ১০০%। প্রথম ব্যক্তি যেহেতু প্রাইভেট ফার্মের কর্মকর্তা যে অধিক সম্ভাবনাময় পেশার প্রতি অধিক মনোযোগ দেবে। দ্বিতীয় ব্যক্তি এমন এক পেশার সহিত যেখান থেকে সফলতা বের করা অনেক কঠিন যা হতে এমএলএম ব্যবসা অনেক সহজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র আছে যারা পার্টটাইম চাকুরী করতে আগ্রহী। প্রকৃতপক্ষে সম্মানজনক স্বাধীন কোন পেশার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা দূর্বলতা থাকেই। আর তা যদি পার্টটাইম করার সুযোগ থাকে তবে কোন কথাই, যেমন এমএলএম ব্যবসা। অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই অনুমেয় কোন দলটি অধিক সম্ভাবনাময়। আপনার বিভিন্ন ছোট বড় দলগুলোকে পর্যায়ক্রমে সাজান। টিমওয়ার্ক করার সময় অবশ্যই অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলগুলোকে অধিক সময় দেবেন এবং নতুন ডিস্ট্রিবিউটর জয়েন করিয়ে যেগুলোকে অন্য দলগুলোর সমকক্ষ করার চেষ্টা করুন। এবং দলগুলোর মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করুন। যেমন- একটি দলে সবাই পার্টটাইমার হলে দলীয় কার্যক্রম ব্যহত হবে। আপনার ডাউনলাইনে প্রতি তিনজনের একজন যাতে ফুলটাইম হয় সেই বিষয়ে নিশ্চিত হউন। তবে কাউকে চাকুরী বা ব্যবসা ত্যাগ করে এমএলএম ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরামর্শ দিবেন না। প্রথমে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যারা বাইনারী পদ্ধতি অনুসরণকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তার টিম গঠন ও টিমওয়ার্কের প্রতি অধিক মনোযোগি হউন। কারণ বাইনারীতে ব্যালেন্সিং এর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ইউনিলেভেল কিংবা ম্যাট্টিক পদ্ধতিতে সেল্স এবং টিম গঠনের প্রতি গুরুত্ব দিন। আর একটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন, বাইনারী পদ্ধতিতে মাঝামাঝি অবস্থানে গিয়েও আপনার আয় কমে যেতে পারে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক আলোচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মিলিওনিয়ার হওয়ার সহজ পথ
আপনার পরিচিতজনের অনেকেই এ মুর্হুতে মিলিওনিয়ার। এদের কেউবা শেয়ার ব্যবসা করে, কেউবা পোষাক শিল্পের মাধ্যমে অথবা কেউ কৃষিভিত্তিক ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন। ভাবছেন তা আপনার পক্ষেও সম্ভব যদি তাদের মতো সুযোগ পেতেন। কিংবা ছোট একটা ভুলের দরুন আপনি পিছিয়ে এবং তারা এগিয়ে। হয়তো আপনি তাদের চেয়েও বেশি সুযোগ পেয়েছেন। যাইহোক আপনি আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায়। যদি লটারী কিনে ভাগ্য পরিবর্তনে বিশ্বাসী না হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই পরবর্তী সুযোগের সদ্ব্যবহার করবেন। আপনার শারীরিক সামর্থ্য আছে এবং মেধাও আছে কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতির দরুন ঝুঁকি নিতে পারছেন না। ঝুঁকি ও বিনিয়োগবিহীন (অনেকাংশে) যে ব্যবসাটি আপনি বেছে নিতে পারেন তাহলো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা। এ ব্যবসাকে ঝুঁকি ও বিনিয়োগবিহীন বলার কারণ আপনি জানেন কিংবা জানবেন। মিলিওনিয়ার হওয়ার পদক্ষেপ সমূহ আমরা আলোচনা করি। পদক্ষেপগুলো হলোঃ
ক) আপনি মনস্থির করুন এ ব্যবসা বেছে নিবেন কি না।
খ) যদি এ ব্যবসা বেছে নেন তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বেছে নিন। কোম্পানী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কমিশন প্লান, পণ্য সামগ্রী, কোম্পানীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি পরখ করে দেখুন।
গ) পরিকল্পনা মাফিক সেমিনার ও প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে ষাম্মাসিক ও বাৎসরিক লক্ষ্য স্থির করুন।
ঘ) পর্যায়ক্রমে ছোট দলের মাধ্যমে বড়দল গঠনের চেষ্টা করুন।
ঙ) বুদ্ধিমত্তার সাথে দল পরিচালনা করুন। প্রয়োজনে আপ-লাইনাদের সাথে পরামর্শ করুন।
চ) আপনার ডাউনলাইনে আপনার ডুপ্লিকেট তৈরী করুন। আপনার মতো ডাউনলাইনে মিলিয়নিয়ার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এমন এসোসিয়েট তৈরী করুন।
ছ) প্রতি মাসে যা অর্জন করবেন পরবর্তী মাসে এর দ্বিগুণ অর্জিত না হলে ধরে নিন আপনার প্রচেষ্টায় ঘাটতি আছে।
জ) যে কোন উপায়ে দলীয় সংহতি বজায় রাখুন। প্রত্যেক সদস্য যাতে সক্রিয় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
ঝ) কোম্পানীর নতুন পণ্য ও সেবা পরিবর্তন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা করুন।
ঞ) কখনো ডাউনলাইনারদের নিকট নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারাবেন না।
ট) স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করুন, প্রফুল্ল থাকুন। আপনার সাফল্য শুরু আপনাকে পরবর্তী পথ দেখিয়ে দেবে।
- মিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে যেসব বাধার সম্মুখীন হতে পারেনঃ
ক) আপনি যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলে অভ্যস্থ হোন তবে দ্রুত হতাশাগ্রস্থ ইষার কারণ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা সময়ের সাথে ধৈর্য্য যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ।
খ) চোখ ধাঁধাঁনো কোম্পানীগুলো আপনাকে প্রতিদিন গাড়ি, বাড়ী ও বিদেশভ্রমনের স্বপ্ন দেখাবে কারণ তারা রাতারাতি পরিবর্তন চায়।
গ) আপনি যত দ্রুত মনস্থির করে ব্যবসায় মনোযোগী হতে পেরেছেন আপনার ডাউনলাইনাররা হয়তো তত দ্রুত সক্ষম হবে না। এতে হতাশা হবেন না।
ঘ) যারা শুরু করেই সফলতা চায় তাদের পিছনে সময় ব্যয় করবেন না। যারা দীর্ঘস্থায়ী সফলতায় বিশ্বাসী তাদের বেছে নিন।
ঙ) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আপনার মনের মতো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন তবে তুলনামূলক ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করুন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠানের নিকট অধিক গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুন।
- যা ভাববেন না এবং করবেন নাঃ
আপনার প্রচেষ্টা, সময়জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা আপনাকে সাফল্যের পথে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু মিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে যা ভাববেন না এবং করবেন না তা হলোঃ
ক) অতি অল্প সময়ে অধিক অর্থের মালিক হওয়ার ভাবনা মনে আনবেন না।
খ) অপ্রচলিত ও অযাচিত পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে সেল্স ভলিউম বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না।
গ) ডাউনলাইনার কিংবা প্রসফেক্টদের মিথ্যে আশ্বাস দিবেন না।
ঘ) পিরামিড স্কীমের বিষয়ে জেনেও না জানার ভান করবেন না।
মনে রাখবেন, পৃথিবীতে সম্পদশালী হওয়া যেমন সহজ কাজগুলোর একটি তেমনি দুরূহতম কাজও বটে। কিন্তু কিভাবে সহজ? সম্পদশালী দশজন ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত পড়ুন। যারা শূণ্য থেকে শীর্ষে উঠেছেন তাদের ছিল মূলত প্রচেষ্টা, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা ও ধৈর্য্য। তাদের মনের বিশ্বাসটুকুকে অবলম্বন করে সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে। আপনি যাই করুন না কেন তা যদি বাস্তব ভিত্তিক ও সঠিক হয় তা থেকে সফলতা আসবেই। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং অলীক বা অবাস্তব নয়। যারা বিশ্বাস করেছে এর মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়া সম্ভব হয়েছে। এবং এও সত্য যে যারা পিরামিড স্কীমের ফাঁদে পা দিয়েছে তারা যা আয় করে এর বেশি ভাগ এ পথেই ব্যয় করে।
একটি ভাল প্রতিষ্ঠান, একটি চমৎকার কম্পেন্সেশন প্ল্যান এবং আপনার দৃঢ়তা ইত্যাদি মিলিয়নিয়ার হওয়ার অন্যতম সহজপথ। যারা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে তাদের অনুসরণ করুন। বিজ্ঞানের অনন্য অবদান নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানে সক্ষম এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করুন। বিশ্বাস করুন আপনি সফল হবেন। অপেক্ষা করুন আপনার সমৃদ্ধজীবনের।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং - যা ভাবছেন তার চেয়ে কঠিন তবে সহজতমকাজগুলোর একটি
আমরা যে কাজটি শুরু করার পূর্বে অসফলতার কথা ভাবি, যে কাজকে কঠিন মনে করি তা পরিশেষে সম্পন্ন করা জটিল হয়ে পড়ে। আবার যে কোন কঠিন কাজকে দৃঢ়তার সহিত সম্পন্ন সম্ভব। অনুরূপভাবে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা শুরু করার পূর্বে যারা বিষয়টিকে জটিল মনে করে তারা সহজ অনেক সম্ভাবনাময় ক্রেতাকে দেখেছি যারা এমএলএম ব্যবসাকে “আদম ব্যবসা” বলে মন্তব্য করে। বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয়তম ও আকর্ষণীয় এ ব্যবসার মূল বিষয়বস্তু বুঝতে যারা অসমর্থ হয় তারাই মূলত এমন মন্তব্য করে। এমএলএম ব্যবসার মূল কাজ হলোঃ
ক) বিক্রয় খ) বিপনন ও গ) স্পন্সরিং অর্থাৎ তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন ক্রেতা সৃষ্টি করা।
একজন ক্রেতা নতুন ক্রেতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র করে সেটিই মূলত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর প্রতিপাদ্য। একজন ক্রেতার জন্য পণ্য ক্রয় যেমন সহজ তেমনি মানসম্পন্ন পণ্যের প্রচারও ততটা সহজ। সাধারণত ক্রেতারা শুধুমাত্র নতুন পণ্য ক্রয় করে এর গুণাগুণ যাচাই করে না বরং উক্ত পণ্য ব্যবহারকারীর নিকট থেকে পণ্য সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করে পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়টিই এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট গুরুত্বপূর্ণ, যে বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত পণ্য প্রসারে সক্ষম হয়।
এমএলএম ব্যবসা বলতে যা কিছু কঠিন বুঝায় তা মূলত কোম্পানীগুলোকেই সম্মুখীন হতে হয়। এমএলএম ব্যবসার ক্রেতাদের জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় তা অন্য যে কোন ব্যবসা হতে চমৎকার। কোম্পানীগুলো ক্রেতাদের বাড়তি আয়ের জন্য নিজস্ব লাভের একাংশ বন্টন করে দেয়। এ ব্যবসায় যারা ব্যর্থ হয় তারা অন্য কোন ক্ষেত্রে সফল হতে অসমর্থ হয়। কারণ এটি সহজতম কাজগুলোর একটি। কিন্তু যারা শুরুতেই ব্যবসাটিকে জটিল মনে করে তারা এ ব্যবসা হতে সফলতা বের করে আনতে অসমর্থ হয়।
স্পন্সরিং এর বিষয়টি সহজ এজন্য যে এক্ষেত্রে অন্যদের প্ররোচিত করার প্রয়োজন হয় না বরং প্রত্যেকের পরিচিতজনকে সহজেই আমন্ত্রন করতে পারে চমৎকার ব্যবসার বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য। যারা আপনার অনুরোধে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করতে সম্মত হয় তাদেরকেই আপনি সেমিনারে বসাবেন। যারা সেমিনার দেখে সন্তুষ্টি অর্জন করে তারা তাৎক্ষনিক কাজ আরম্ভ করতে আগ্রহ করে প্রকাশ করে। এবং যারা সেমিনার দেখে বিষয়টির প্রতি কম আগ্রহ দেখায় তাদেরকে ক্লোজিং দিন এবং ফলোআপ করুন। এমএলএম ব্যবসায় যে কোন কমিশন পদ্ধতিতে স্পন্সরিং গুরুত্বপূর্ণ হোক সেটি ইউনিলেভেল, হোক বাইনারী কিংবা ম্যাট্টিক্স। এককভাবে উন্নয়ন ব্যতীত দশের মাধ্যমে উন্নয়ন অর্থাৎ শীর্ষে উত্তোরনের জন্য প্রত্যেকে সহযোগিতা আবশ্যক” এটিই এ ব্যবসার মূলমন্ত্র। আর এজন্যই স্পন্সরিং এর মাধ্যমে দলগঠন গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয় অধ্যায়
এম.এল.এম. পণ্য সামগ্রী বিক্রয় কৌশল
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সাফল্যের স্বর্ণ শিথরে পৌঁছেছেন এমন উদাহরণ অনেক। মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ যে কোন পেশার চেয়ে আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং। এমএলএম পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন হলেও পার্টটাইম চাকুরী বা বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এ ব্যবসায় বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন পেশার ও বিভিন্ন বয়সের মানুষের আগমন ঘটে। প্রত্যেকের বিক্রয় জ্ঞান থাকে না যার দরুন অনেকেই বিক্রয় ও বিপণন কার্যক্রমে সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রত্যেক এমএলএম ওয়ার্কারের প্রতি লক্ষ্য রেখে নিম্নে বিক্রয় কৌশল তুলে ধরা হলো। কিন্তু পণ্য সামগ্রী বিপণনের পূর্বে আমাদের কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন-
ক) পোষাক পরিচ্ছদ অর্থাৎ ড্রেস কোড ঠিক রাখা।
খ) কোম্পানীর পণ্য ও সেবা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা।
গ। ধৈর্য্যশীল ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা।
ঘ) কন্ঠস্বর স্পষ্ট হওয়া বাঞ্চনীয়।
ঙ) ভোক্তা বা ক্রেতাদের মনস্তাত্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা।
এবার আসা যাক বিক্রয় কৌশল কেমন হতে পারে।
১। মনোযোগ আকর্ষণঃ যে কোন পণ্য বিক্রয় বিশেষত এম.এল.এম. পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ে মনোযোগ আকর্ষণ একটি বিশেষ কৌশল। যেমন ধরুন, আপনি একটি টিভি ক্রয় করে তা আপনার ড্রইংরুমে সাজালেন। যে কারোর কৌতুহল এতে সৃষ্টি হবে। এবার টিভির বিষয়টি এলেই আপনি এ ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ পাবেন।
২। প্রকৃত ভোক্তা অনুসন্ধানঃ ধরা যাক আপনার প্রতিষ্ঠান জীবন রক্ষাকারী ঔষধ উৎপাদনকারী। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ঐসব মানুষদের খুঁজে বের করতে হবে যাঁরা ঔষধ সেবনে অভ্যস্থ, যারা ঔষধ সেবনের মাধ্যমে উপশম পেতে চায়। এক্ষেত্রে আপনি পরিচিতজনদের প্রত্যেকের খোঁজে নিন নিয়মিত। যারা আগ্রহ প্রদর্শন করে তাদের ঔষধের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উৎস সম্পর্কে ধারণা দিন।
৩। নমুনা বিতরণঃ আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য সামগ্রীর মান ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য সমূহ অন্যদের নিকট গ্রহণযোগ্য করার জন্য পণ্যের নমুনা বিতরণ করতে পারেন।
৪। ক্রেতার চাহিদা বিশ্লেষণঃ আপনার পরিচিতজন বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের চাহিদা বিশ্লেষণ করুন। এমন অনেকেই পাবেন যাদের চাহিদা অনেক কিন্তু তা সবটুকু পূরণে অসমর্থ, অর্থাৎ তাদের প্রয়োজন বাড়তি আয়ের। প্রথমে পণ্য সামগ্রী প্রদর্শন করুন অতপর কোম্পানীর প্ল্যান।
৫। ব্যক্তিগত প্রচারঃ কথায় আছে “প্রচারই প্রসার” আপনি বিভিন্নভাবে প্রচার করতে পারেন। যেমন লিফলেট ও কোম্পানীর পণ্য তালিকা বিতরণ ফোনালাপ, চা-চক্র আয়োজন ইত্যাদি।
৬। পণ্য সম্পর্কে পূর্ব ধারণাঃ পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের পূর্ব ধারণা প্রদানের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। এমন অনেক ক্রেতা আছেন যারা পণ্য সম্পর্কে জানেন না বিধায় পণ্য ক্রয় করেন না। পণ্য সম্পর্কে আপনার প্রদানকৃত তথ্য ক্রেতাকে পণ্য ক্রয় সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করবে।
৭। দৃঢ় প্রত্যয়ঃ ক্রেতা বিক্রেতার পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে কি কি লাভ পেতে পারে তা উপস্থাপনা করার মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ে ক্রেতার মধ্যে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি করতে হবে। ক্রেতা যাতে মনে করে বিক্রেতার সকল বক্তব্যই সম্মত ও সন্তোষজনক।
৮। সঠিকভাবে পণ্য প্রদর্শনঃ সঠিকভাবে পণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে পণ্য সামগ্রী দর্শকদের নিকট উপস্থাপনা জরুরী। পণ্য প্রদর্শন সকল শ্রেণীর ক্রেতাদের নিকট পছন্দনীয়। সঠিক ও সুন্দরভাবে পণ্য প্রদর্শন ক্রেতাকে ক্রয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
৯। নিশ্চয়তা প্রদান করুনঃ আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে নিশ্চয়তা প্রদান করুন। পণ্য ও সেবা বিষয়ক যে কোন ইতিবাচক নিশ্চয়তা আপনার প্রতি ক্রেতার বিশ্বাসকে আরো নিবিড় করে তোলবে।
হারবাল পণ্য ও নিউট্রিশনাল ফুড সাপ্লিমেন্ট্স বিক্রয় কৌশল
বিশ্বব্যাপী মাল্টিলেভেল মার্কেটিং, কিংবা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানীগুলোর অনেকগুলোই হারবাল পণ্য সামগ্রী এবং ফুড সাপ্লিকেন্ট্স বাজারজাত করে। ঔষধ সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সফলতা লাভ করে দুটি কারণে প্রথমতঃ মৌলিক চাহিদা পূরণ ও জীবন রক্ষাকারী ঔষধ বিপণন এবং দ্বিতীয়টি হলো আধুনিকতম বিপণন পদ্ধতি গ্রহণ। একারণে এসব প্রতিষ্ঠানের কমিশন প্ল্যান যাই হোক না কেন বাজারে তাদের অবস্থান বরাবরই ভাল। বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং অধিকাংশই জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, হারবাল পণ্য ও প্রসাধনী এবং খাদ্য সামগ্রী বাজারজাত করছে। এখন হারবাল পণ্য ও নিউট্রিশনাল ফুড প্রোডাক্টস বিক্রয়ে সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব।
প্রথম পদক্ষেপ হলো আপনার প্রতিষ্ঠান ও পণ্য সামগ্রী সম্পর্কে জানুন। পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হউন। পণ্যের মোড়কে যেসব নির্দেশনা দেয়া থাকে তা ভালোভাবে পড়ুন। পণ্যের মূল্য বাজারের সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা যাচাই করে নিন।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো পণ্যের ব্যবহার ও প্রয়োগ ভালোভাবে জানার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন বিক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য পণ্য সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা আবশ্যক।
তৃতীয় পদক্ষেপ ক্রেতা চিহ্নিতকরণ এ পর্যায়ে আপনাকে উক্ত পণ্যের ক্রেতা বা ভোক্তা চিহ্নিত করতে হবে। হারবাল পণ্য ক্রয়ের জন্য ক্রেতাকে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। “সুস্থ ও নিরাপদ জীবনের জন্য হারবাল ও নিউট্রিশনাল ফুড গ্রহণ প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজন” এ স্লোগানটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ক্রেতা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বয়স, আর্থিক অবস্থান, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। ক্রেতার চাহিদা কি বা কি হতে পারে এবং মনোভাব বিশ্লেষণ করা উচিত। যেমন এমন অনেকেই আছেন যারা হারবাল পণ্যে আস্থা রাখে কিন্তু নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিক তথ্যের অভাবে ক্রয় হতে বিরত থাকে। অতএব ক্রেতা চিহ্নিতকরণ সফল বিক্রয় কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চতুর্থ পদক্ষেপ হলো সেল্স টীম বা বিক্রয় দল গঠন। এমএলএম পদ্ধতিতে সেল্স টীম ব্যতীত এককভাবে পণ্য বিক্রয় করে সাফল্য লাভ অনেক কঠিন। বরং স্পন্সরিং এর মাধ্যমে টীম (দল) গঠন ও সম্মিলিত প্রয়াসই সফলতার মূল ভিত্তি। এজন্য উচ্চকাঙ্খী, আয়প্রত্যাশী, পরিশ্রমী মানুষ বাছাই করুন যারা আপনার সেল্স টীমের সদস্য হবেন।
উপরোক্ত পদক্ষেপ অনুযায়ী এগুলো যে কেহ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এমএলএম ব্যবসায় পরিশ্রম নেই এমন ধারণা ভুল। তবে এ সত্য যে অনেক কম পরিশ্রম ও ঝুঁকিবিহীন ব্যবসার মাধ্যমে দ্রুত আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করা সম্ভব, স্বাধীন জীবন যাপন সম্ভব। আমরা এমওয়ে কর্পোরেশন, ইউজানা, এভন কিংবা হারলাইফ ইন্টারন্যাশনাল সম্পর্কে জানলে এর সত্যতা অনুধাবন করতে পারব। ইনসাল্লাহ্ পরবর্তীতে বিক্রয় কৌশল ও হারবাল পণ্য নিয়ে আরো ব্যাপক লিখতে পারব এ প্রতাশা রইল।
সঠিক এমএলএম প্রতিষ্ঠান বাছাই করা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?
সারা পৃথিবীব্যাপী নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতির জোয়ার বইছে। বাংলাদেশেও অল্প বিস্তর এ পদ্ধতির বিস্তার ঘটছে যদিও কখনও জোয়ার কখনো ভাঁটা এমন অবস্থা বিরাজমান। তবুও আমরা আশাবাদী যে খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রসার ঘটবে। একজন আগ্রহী ব্যক্তি কিংবা ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আপনি কিভাবে একটি সঠিক এমএলএম প্রতিষ্ঠান বেছে নেবেন? এজন্য নিন্মোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করুন এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলিয়ে নিন।
ক) কোম্পানী সংক্রান্ত বিষয়াবলীঃ আমরা যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করি না কেন অবশ্যই কোম্পানীর আদি-অন্ত জানা আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অগ্রগতি। সাধারণত যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো যাচাই করা প্রয়োজন সেগুলো হলো-
১. কোম্পানীর ধরন (যেমন-পাবলিক লিমিটেড, প্রাইভেট লিমিটেড, ট্রেডিং হাউজ, সমবায় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি)।
২. কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা।
৩. কোম্পানীর ভিত্তি বা মূলধন।
৪. কোম্পানীর পণ্য বা সেবার গ্রহণযোগ্যতা।
৫. কোম্পানীর রেজিষ্ট্রেশন (সরকারী বিধি মোতাবেক)।
৬. কোম্পানীর সুনাম ও বয়স।
৭. কোম্পানীর নীতি ও কৌশল।
৮. কোম্পানীর মুনাফানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
খ) কোম্পানীর পণ্য ও সেবা সংক্রান্ত বিষয়াবলীঃ পণ্যই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি। কোম্পানীর পণ্য ও সেবা যাচাই আবশ্যক, কারণ বিগত ৬-৭ বছর ধরে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান নজরে এসেছে যারা পাইকারী বাজার হতে পণ্য কিনে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে। যেমন-ডিনারসেট সো-পিছ, কসমেটিকস্ ইত্যাদি। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রশাধনী ও সো-পিছ জাতীয় পণ্য বাজারজাত করে, ভেবে দেখুন এসব প্রতিষ্ঠান যদি পাইকারী হতে পণ্য সংগ্রহ করতো বিষয়টি কেমন দাঁড়াতো। পণ্যও সেবা বিষয়ক নিন্মোক্ত বিষয়গুলো যাচাই করুন।
- পণ্যসমূহ গুনগুলো মানসম্পন্ন কিনা?
- পণ্যটির মূল্য বাজারের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা?
- পণ্যটির চাহিদা কেমন?
- পণ্যের মূল্য অনুযায়ী কমিশন পাওয়া যাবে কিনা?
- পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবা আছে কিনা?
- পণ্যটি কোম্পানী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কিনা?
- পণ্যটি পূণরায় বিক্রয়যোগ্য কিনা?
গ) কোম্পানী কমিশন প্ল্যানঃ আপনার ভবিষ্যত অগ্রগতি অনেকাংশ নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কমিশন পদ্ধতির উপর। আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এমন জটিল কমিশন প্ল্যান গঠন করে যা আপনার পক্ষে বুঝা অনেক দূরহ ব্যাপার। কমিশন প্ল্যান তৈরী জটিল বিষয় নয় বরং ক্রেতাদের জন্য জটিল করে তোলা মানে ক্রেতাদের ঠকানোর ফাঁদ বসানো। কমিশন প্ল্যান বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষন করুন।
১. কমিশন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে। আমার পূর্ববর্তী বই “বিপণন বিবর্তন” বইটিতে মৌলিক কমিশন পদ্ধতিগুলো ব্যাখার চেষ্টা করেছি। বিধায় এখানে পূনরায় তা করছিনা। এসব পদ্ধতিগুলোর আংশিক নিয়ে যারা বিষয়টিকে জটিল করেছে তারা মূলত প্রতিহিংসা পরায়ন কমিশন প্ল্যান যত সহজ তত সফল।
২. কমিশন প্ল্যান পণ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা যাচাই করে নিন।
৩. কমিশন প্ল্যান স্বল্পমেয়াদী নাকি দীর্ঘমেয়াদী গুরুত্ব প্রদান করে তা পর্যবেক্ষণ করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে কমিশন জীবন যাত্রার সহিত মানানসই না হলে ডিস্ট্রিবিউটর ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ আপ-লাইনারদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. কমিশন পদ্ধতি নতুন ক্রেতা আনয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে নাকি পণ্য বিক্রয়ের উপর গুরুত্বপ্রদান করে তা যাচাই করুন।
ঘ) কোম্পানীর নীতিমালা পর্যবেক্ষণঃ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু উদ্দেশ্য ও নীতিমালা থাকে যা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতমূখী ভাবনা সম্পর্কে ধারণা দেয়। যে কোন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পূর্বে একজন সচেতন নেটওর্য়াকার হিসেবে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা দীর্ঘমেয়াদীও কল্যাণমুখী হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চার পাঁচ জন নেটওর্য়াকারই যথেষ্ঠ।
এমএলএম প্রতিষ্ঠান গড়তে যা মনে রাখা উচিত
এটা খুবই আশাপ্রদ যে বিগত পাঁচ-সাত বছরে আমাদের দেশে অনেকগুলো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্র্কেটিং ফার্ম গড়ে উঠেছে। কিন্তু কিছুটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক প্রতিষ্ঠানই অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানই পরিদর্শন করেছি, তাদের সেমিনার দেখেছি, পণ্য সামগ্রীর তালিকা পড়েছি, নিজের অভিজ্ঞতার জন্যই আমি ঐসব প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়েছিলাম। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বিষয় চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম, যেসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সফল করতে সক্ষম হয়নি। সাধারণ কারণগুলো হলোঃ
১. অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাগণ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে নকল করে কারণ তারা দ্রুত অর্থশালী হতে চায়।
২. অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক এমএলএম সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখে না। তারা মূলত নিকট আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধব দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এ ব্যবসার দিকে ঝুঁকে।
৩. শুধু অফিস স্পেস ও কম্পিউটার সফটওয়্যার সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদে পিরামিড স্কীমের আশ্রয় নিয়ে সম্পদশালী হতে চায় বিধায় এ নেতিবাচক পরিণতি ঘটে।
৪. অনেক ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্ক ব্যবসা হতে আয় করে নিজেরাও প্রতিষ্ঠান গড়তে চায়। প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে চাওয়া অপরাধের নয় কিন্তু নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এমএলএম শিল্পের ক্ষতি করাটাই সমস্যার।
৫. স্বল্প সময়ের মাঝে সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হলে অনেকেই কমিশন প্ল্যান ও পণ্যতালিকায় ঘনঘন পরিবর্তন করে যা আরো সমস্যাপূর্ণ হয়ে উঠে। এক সময় তারা বিতর্কিত হয়ে পড়ে।
এমএলএম প্রতিষ্ঠান গড়তে যা করা উচিত এবং কিভাবে এগোনো উচিত সে বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করবো।
ক) প্রথমেই আপনি নিশ্চত হউন কেন আপনি এমএলএম ব্যবসা বেছে নিবেন।
খ) যদি আপনি সিদ্ধান্ত নেন এমন যে, প্রথমে কমিশন প্ল্যান গঠন করে পরবর্তীতে পণ্য সামগ্রীর প্যাকেজ তৈরী করবেন তবে তা ভুল সিদ্ধান্ত হবে। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন কি পণ্য বা সেবা বাজারজাত করবেন অতপর সে অনুযায়ী কম্পেন্সেশন প্ল্যান গঠন করুন।
গ) যদি সিস্টেম ও সুযোগ বিক্রয়ের মাধ্যমে বিপণন কার্যক্রম চালাবেন এমনটি ভাবেন তবে তা ভুল সিদ্ধান্ত হবে বরং পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা সমপ্রসারণ করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিন।
ঘ) প্রথমেই লাখো মানুষের সমাগমের পথ তৈরী না করে পণ্য সমপ্রসারণের মাধ্যমে সাধারণ ক্রেতার গ্রহনযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করুন।
ঙ) অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রয় না করে বাজারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্য নির্ধারণ করুন।
চ) পণ্য লাইনে নতুন পণ্যের অন্তভুক্তির চেষ্টা করুন। অধিক লাভের আশায় অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত ও মৌসুমী পণ্য বাজারজাতের চেষ্টায় থাকবেন না বরং নানাবিধ মানসম্মত পণ্য বাজারজাত করুন।
আমাদের দেশে ক্রমাগত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটছে। ব্যবসা বাণিজ্যে পরিবর্তন ঘটছে দ্রুততার সাথে। আজকে আপনি যে ব্যবসা শুরু করবেন ভাবছেন তা অবশ্যই ভবিষ্যতমুখী হতে হবে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা বর্তমানে যে অবস্থায় আছে আগামী পাঁচ বছর পর তা আরো ব্যাপক প্রসারিত হবে এটিই সত্য। বিক্রয় ও বিপণনে যে নতুনত্ব আসছে তার সাথে খাপ খাইয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গঞন করতে হবে। পূর্বের চেয়ে ক্রেতারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান, তাদের চাহিদাও অনেক বেশি। এজন্যই ক্রেতাদের অনেক বেশি প্রদান করেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করা কঠিন। এজন্য আপনি ব্যবসা পরিকল্পনার পূর্বে কমপক্ষে দশবছর সামনের পরিকল্পনা করুন। বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর চমৎকার ভবিষ্যৎ সামনে রেখে এমএলএম শিল্পকে বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখতে হবে উদ্যোক্তা ও নেটওয়ার্কদের।
প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা
আমাদের দেশ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতির জন্য খুবই উপযুক্ত। আমার পূর্ববর্তী বইতে তা যথাসম্ভব ব্যাখ্যার চেষ্ঠা করেছি। জানিনা কতটুকু সঠিক লিখতে পেরেছি। আমার সকল লেখার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা। আজ পর্যন্ত দেশীয় কোন প্রতিষ্ঠানই সাধারণ জনগনের আস্থা অর্জন করতে ততটা সক্ষম হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক সফলতার বিষয়টির সাথে অনেক কিছু জড়িত। দু’একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা অন্যদের প্রেরণা যুগাতো। জন্ম হতো নতুন নতুন উদ্যোক্তার। এক কথায় বলতে গেলে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে না আসার কারণ-এমএলএম সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব ও নেতিবাচক পরিবেশ।
ব্যবসায়ী মানেই উদ্যোক্তা নয়। উদ্যোক্তা হতে হলে প্রয়োজন ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা, নতুনকে গ্রহন করার সাহস, সৎ উদ্দেশ্য ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী। আমাদের দেশে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির সংখ্যা বাড়লেও উদ্যোক্তার অভাব রয়েই গেছে। আবার এমন একজন উদ্যোক্তার সাথে পরিচয় ঘটেছিল যিনি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা না বুঝেই অন্যের সহায়তায় আরম্ভ করেছিলেন।
অন্যরা যা করে লাভবান হচ্ছে তাই আমাকেও করতে হবে-এ মানসিকতাই আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। “আমি লাভের মধ্যে আছি লোকসানে নেই”-এমন যাদের মনোভাব তারা উদ্যোক্তা হবে কেন? অন্যের দেখানো পথ অনুসরণ না করে নিজে পথ আবিষ্কার করাই উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য।
সনাতন পদ্ধতিতে বাজারজাত করতে গিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের উপক্রম বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ন হয়ে। বাজারজাতকরণের পরিবর্তন অর্থাৎ সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি বেছে নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব কিনা তাও যাচাইয়ের সুযোগ গ্রহণ করে না শিল্পোদ্যোক্তারা। এমএলএম বিষয়ে জানার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণ ও এমএলএম সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন আবশ্যক। শিল্পোদ্যোক্তাদের মাঝে এ বিষয়টি অনুপস্থিত।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ না করার অন্য একটি কারণ নেতিবাচক পরিবেশ। বিগত চার-পাঁচ বছর আমাদের দেশে প্রায় অর্ধশত এমএলএম প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যার অধিকাংশই টিকে থাকতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসে এবং যে কমিশন প্ল্যান গঠন করে তা সাধারণ মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পায় না। একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দু’চারটা কম্পিউটার বসিয়ে চকবাজার হতে পাইকারী দামে পণ্য কিনে প্যাকেজ তৈরী করে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর স্বপ্ন দেখানো বোকামী ছাড়া কিছুই না। নতুন পণ্য বা পদ্ধতি বাজারে যত দ্রুত বদনাম ছড়ায় যদি এসব দ্বারা মানুষ প্রতারিত হয়। আমাদের উপমহাদেশের মানুষের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো আবেগ প্রবণতা, খুব সহজে মানুষকে আপন করে নেয় আবার সামান্য কারণে দূরে ঠেলে দেয়। যার দরুন ইতিবাচক পরিবেশ দ্রুত নেতিবাচক পরিবেশে রূপান্তর হয়।
আমাদের দেশের একটা চিরাচরিত নিয়ম হলো, নতুন কোনো পণ্য বা পদ্ধতি শুরু হওয়ামাত্র অনেকে তা নকল করে অথবা অন্য কোন উপায়ে কায়দা লুটতে চায়। এর উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ নন-গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশন বা এন.জি.ও. এন.জি.ও-র সাইনবোর্ড লাগিয়ে অর্থ আত্নস্বাত প্রতারণামূলক যেসব ঘটনাগুলো ঘটছে তা প্রতিনিয়ত পত্রিকায় আসছে। এজন্য সব এন.জি.ও গুলোকে দোষারোপ করা যায় না। অনুরূপভাবে কিছু মানুষ এমএলএম পদ্ধতির অনুকরণ করতে গিয়ে নেতিবাচক পরিবেশ তৈরী করছে। সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ যারা গ্রহণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এজন্য সুশিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষগুলোর ভূমিকা অনিবার্য। আবেগপ্রবণ ও বিচলিত না হয়ে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বিষয়ে জানুন, বুঝুন অতপর সিদ্ধান্ত নিন।
শুধু নেটওয়ার্কার হলে চলবেনা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন সৎ, দক্ষ, বিচক্ষন ও জ্ঞানাম্বেষী নেটওয়ার্কার। দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত এদেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়াতে প্রয়োজন মহৎ নেটওয়ার্কাদের ভূমিকা।
আমরা যেখানে শুরু করেছি সেখানেই শেষ করতে চাইনা, উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করে যারা দেশের আনাচে-কানাচে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর সুনাম ছড়িয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এজন্য প্রয়োজন সহযোগিতা। আত্মবিশ্বাস ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।
No comments:
Post a Comment