Sunday, 13 October 2013

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কেন করি? Kazi ashraful Islam

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কেন করি? এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং করি। প্রত্যেক মানুষই জীবনে সফলতা চায়। সফলতা কোনো সোনার হরিণ নয়। আপনি সফল এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ জন্ম নিয়েছে সফল হওয়ার জন্য। মানুষের জীবনে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। তথাপি এমন লোকের নাগাল পাওয়া মোটেও কষ্টসাধ্য নয়, যে নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে বলে থাকে, সফলতা আমার জন্য নয়। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্পষ্টতই বলেছেন, 'যে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে না আমি তার ভাগ্যের পরিবর্তন করি না।' তার মানে হচ্ছে চাইতে হবে বা স্বপ্ন দেখতে হবে। কী রকম স্বপ্ন। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন। মানুষ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে না; যা দেখে তা ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি মাত্র। ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই তা ভেনিশ হয়ে যায়। মানুষ স্বপ্ন দেখবে জেগে জেগে। স্বপ্ন দেখে নিজের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবে। প্রশ্ন জাগতে পারে, কেমন স্বপ্ন? এই স্বপ্নকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করবো। প্রথমত, ব্যক্তিগত স্বপ্ন। যে স্বপ্ন আমাদের সফলতার পথ দেখাবে। আমরা সবাই সফল হতে চাই; কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কী_ সফলতা কি? কেউ গান গেয়ে সফল হতে চাই, কেউ কবিতা লিখে সফল হতে চাই। কেউ পছন্দের খাবার খেয়ে নিজেকে সফল ব্যক্তি ভাবি। আবার কেউ ভালো বক্তৃতা করেও নিজেকে সফল ভাবি। এমনিভাবে চাকরি, ব্যবসা, বুদ্ধিবৃত্তি আরো বহুবিধভাবে আমরা নিজেকে সফল ভাবি। এসব ক্ষেত্রে অনেকের সফলতা আবার আকাশচুম্বী। মাঝে মধ্যে পত্রিকার পাতায় দেখি অমুক গাঁয়ের অমুক হাঁস-মুরগির খামার করে সফল। কেউ আবার বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করে সফল। সফলতার এই ধারাটিকেও কিন্তু কোনো অংশে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত একটি পরিবারের দুবেলা দু-মুঠো অন্নের সফলতাকে আমরা নিশ্চয়ই সম্মান করবো। কিন্তু প্রকৃত সফলতার কথা জানতে চাইলে আপাত সফল ব্যক্তির বুক চিরে একটি লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসবে_ কারণ এখনো তিনি তার পছন্দের বাড়িতে থাকেন না। তিনি তার পছন্দর গাড়িতে চড়তে পারেন না। তিনি তার পছন্দের জামাটি কিনতে পারেন না, পরিবারের চাহিদামতো খরচ করতে পারেন না। সুতরাং ব্যক্তিগত স্বপ্ন হবে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের যথার্থ বাস্তবায়ন। মানুষ পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ। তাই তাকে পারিবারিক স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য স্বপ্ন দেখতে হবে। আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসি। তাদের সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের প্রাণ আকুলি-বিকুলি করে। কিন্তু আমরা ক'জন বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে পারি। 'আমি আমার মাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসি, তার জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে আমার দ্বিধা নেই। আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে এত ভালোবাসি যে, তাদের জন্য জীবন বাজি রাখতে পারি'_ এসবই হচ্ছে আমাদের মুখের কথা। কারণ আমরা তাদের সত্যি সত্যিই ভালোবাসি। আসুন এই ভালোবাসার একটি প্রমাণ দেয়া যাক (খোদা না করুন)। 
একদিন স্কুল থেকে প্রচ- জ্বর নিয়ে আপনার প্রিয় সন্তানটি বাড়ি ফিরল। কয়েক দিন গেল। কোনো ওষুধে জ্বর সারছে না। আপনি দুশ্চিন্তায় ডুবে গেছেন। আপনার স্ত্রী অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। অবশেষে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরীক্ষায় ধরা পড়লো আপনার সন্তানের লিউকোমিয়া অর্থাৎ বস্নাড ক্যান্সার। চিকিৎসার জন্য এক্ষুনি বিদেশে নেয়া দরকার। প্রাথমিক অবস্থা, সুচিকিৎসায় সেরে যাবে। তার চিকিৎসার জন্য লাখ বিশেক টাকা দরকার। সন্তানের জন্য আপনি অবশ্যই আপনার সর্বস্ব বিক্রি করে দিতে রাজি; কিন্তু আপনার পরিবার পরিজনের ভবিষ্যৎ? পরিবারের যে কোনো সদস্যের প্রয়োজন মেটাতে আপনি কি নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে পেরেছেন? যদি উত্তর না-সূচক হয়; তাহলে? আপনাকে পারিবারিক স্বপ্ন দেখতে হবে। পরিবারের সবার মুখে হাসি ধরে রাখতে যা করা দরকার তার সন্ধান করতে হবে। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক। আমাদের জাতীয় সংগীতে বলা হয়েছে 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...'। আমরা আমাদের দেশকে সন্দেহাতীতভাবে ভালোবাসি। তাই তো ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করে বিশ্বের মানুষকে অবাক করে দিয়েছি। আমরা রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক স্বাধীনতা লাভ করেছি বটে; কিন্তু আজো অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারিনি, যা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পূর্বশর্ত ছিল। আপনি যখন স্বাধীন দেশের রাস্তায় মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে থাকেন তখন আপনারই সন্তানের বয়সী একটি শিশু যখন ভিক্ষার জন্য হাত বাড়ায় তখন কি আপনার বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে না? এই দীর্ঘশ্বাস কেন? তা কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেছেন? মানুষের জন্য অনেক ভালো কাজ করার বাসনা আমাদের প্রত্যেকের মনেই লুকিয়ে আছে। আমরা ভালো কিছু করতে চাই। আমরা মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চাই। আমাদের এই চাওয়ায় কোনো খাঁদ নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা একটাই তাহলো আমরা এখনো নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দিতে পারিনি। সুতরাং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করা মানেই এম.এল.এম. বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং। দ্রুত এবং কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। 
আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, বিবেক বুদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়েই সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সুচিন্তিতভাবে এবং আত্মবিশ্বাস সহকারে অগ্রসর হওয়া মানেই হচ্ছে অনিবার্য এবং অবধারিত সফলতা। জীবনে এই সফলতার জন্য যে জিনিসটির বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনে সফল হতে হলে সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। কোনোভাবেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য নয়। জীবনে সমস্যা আসতেই পারে এটা খুবই স্বাভাবিক। সফল মানুষ মাঝে মধ্যে সমস্যা বা ব্যর্থতাকে ওয়েলকাম করেন। যারা সৎ, সাহসী, ন্যায়পরায়ণ এবং অধ্যবসায়ী, যশ খ্যাতি এবং প্রতিষ্ঠা তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। সফল মানুষ মনে করেন অপরাপর সব মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা এবং তা টিকিয়ে রাখা তার নিজের দায়িত্ব। আর এসবই সম্ভব জীবনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এমনই একটি কর্মসাধনা, যার দ্বারা একজন মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নিজেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করতে পারে। আর এ কারণেই আমি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং করি।

No comments:

Post a Comment